Sunday, July 1, 2012

মুখোশ (২য় পাঠ)

প্রয়াত পপ তারকা মাইকেল জ্যাকসন বলতেন... তাঁর শৈশব বলে কিছু ছিল না। এই বয়সে সবাই যখন খেলাধুলা নিয়ে মেতে থাকত, তিনি তখন গান নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন স্টুডিওতে।

তাই তার সন্তানদের স্বাভাবিক শৈশব নিশ্চিত করতে তিনি তাদের মুখোশ পরাতেন। কারণ, তিনি চাইতেন, বাইরের কেউ যেন তাদের চিনতে না পারে। তাঁর মতো ব্যস্ত ও খ্যাতির বিড়ম্বনার জীবন নয়, সন্তানদের স্বাভাবিক শৈশব চেয়েছিলেন তিনি।

ইতিবাচক বা নেতিবাচক যাই বলি না কেন... বিভিন্ন কারণে মানুষ নিজেদেরকে মুখোশে আড়াল করে রাখে...

অনেককে দেখি পরিবারে শান্তি টিকিয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত মুখোশ পরে জীবন যাপন করতে...

বহু পুরুষকে দেখি রাজা রামমোহন রায়ের মুখোশ পরে নারীর ক্ষমতায়নে রাস্তায় নারী আন্দোলনে বড় বড় বক্তৃতা দিতে... আবার তাকেই দেখি... ক্ষমতার বলে বলীয়ান হয়ে নরপশু হিসাবে। তাদের বোধে ধরা দেয় না, নারীও একজন মানুষ।

সভা ও সেমিনারে বহু নেতা-নেত্রীকে দেখি শিশুদের অধিকারের দাবিতে গলা ফাটাতে, বাসায় ফিরে তাদেরকেই আবার দেখি ঘরের ছোট্ট গৃহকর্মীটিকে নির্যাতন করতে!

উন্মুক্ত মানসিকতার মুখোশে হাওয়ায় ভাসতে থাকা অনেক নারী-পুরুষকে দেখি ক্ষমতার অপব্যবহার করতে। স্বার্থান্ধ এই মানুষগুলো ভেবেও দেখতে চায় না যে, ভালো ও মন্দের সহবস্থান সকল সমাজে, সবখানেই আছে। এদের বোধগম্য নয়... উন্মুক্ত মানসিকতা মানেই উন্মত্ত মানসিকতা বা স্বেচ্ছাচারীতা নয়!

ধর্মপ্রাণ মুখোশের আড়ালে দেখি কুৎসিত চেহারা...

দেখি, রাজনৈতিক দলের সমর্থনপুষ্ট হওয়াতে শ্রমিক না হয়েও শ্রমিক নেতা বনে যেতে... শ্রমিকদের স্বার্থ না ভেবে আপন আখের গুছাতে...

নিজেকে আদর্শবাদী প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে অনেককেই দেখি... অনৈতিকতা বা বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক থাকার দায়ে স্বল্প বেতনের কর্মচারীটিকে চাকুরিচ্যুত করিতে... সেই একই ধরনের দুষ্টতাকে নিজের বা আপনজনের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত মানসিকতার ফসল বলে আত্মসুখ লাভ করতে।

দেখি, মানবপ্রেমী উন্মুক্ত মানসিকতার দাবীদার মানুষগুলোকে মানব বিরোধী অনৈতিক কার্যকলাপে মত্ত থাকতে...

দেখি, সমাজে আদর্শবান অনৈতিক কার্যাবলীর বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর বলে পরিচিত মানুষগুলোকে নিজের সন্তানের অবৈধ-অনৈতিক কার্যাবলী মেনে নিতে বা পর্দার আড়াল থেকে তাদের অবৈধ কাজে মদদ দিতে।

দেখি, অধিকার সচেতন মানুষগুলোর অপরের অধিকার সম্পর্কে অসচেতনতা...
এই জগতের রঙ্গমঞ্চে প্রত্যেকেই বহন করে এক বা একাধিক মুখোশ। অবস্থার
পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজন মত পরিধান করে নেয় উপযুক্ত মুখোশটি।

প্রতিটি মুখোশে মিশে থাকে প্রতারণার রং, মিথ্যে অভিনয়ের চরিত্র, ভালমানুষির মুখোশে কথার চাতুর্যতায় লোকদেখানো চাকচিক্য...

অনেক সময় দমকা বাতাসে খসে পরে অনেকের মুখোশ... উন্মোচিত হয় আসল চেহারা...

বেরিয়ে পড়ে থিকথিকে কলুষতায় পূর্ণ অনেক প্রিয় মুখ! যা দেখে ঘৃণায় বিকৃত হয়ে ওঠে মুখ... রি রি করে ওঠে সমস্ত শরীর...

আবার কোন কোন সময় বের হয়ে আসে কিছু মমতায় পূর্ণ... জীবনের প্রতি পদে পদে প্রতারিত... অবহেলিত মুখ... যা দেখে অজান্তেই চোখের কোণ ভিজে ওঠে ।

No comments:

Post a Comment

Thank you for your time. I will get back to you soon.
Nathan