Saturday, May 5, 2012

God Vs Something from Nothing

 
এই পৃথিবীতে কেউই আস্তিক বা নাস্তিক হিসাবে জন্মগ্রহন করে না। জীবনের পরিক্রমায় কেউ আস্তিক বা নাস্তিক হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। এক্ষেত্রে বলে রাখা প্রয়োজন নাস্তিকবাদিরা নিজেদেরকে নাস্তিক না বলে যুক্তিমনষ্ক হিসেবে পরিচয় দিতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন।

আস্তিক বা নাস্তিক সবারই কোন একটি ধর্ম সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকে বলে আমি মনে করি।

মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে প্রায় প্রতিটি ধর্মগ্রন্থেই কমবেশী আলোকপাত করা হয়েছে। আমার এই লেখার ভিত্তি হিসাবে আমি ধরে নিচ্ছি ধর্মীয় দৃষ্টি কোণ থেকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা আমার ব্লগ এর পাঠকদের রয়েছে। যদিও বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে মহাবিশ্বের সৃষ্টিকে বিভিন্ন আংগিকে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এ নিয়ে যথেষ্ট মত পার্থক্যও রয়েছে।

আমি এই লেখাটির পূর্বে মহাবিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ, বৈজ্ঞানিক মতবাদ, গোত্রভিত্তিক মতবাদ, পৌরাণিক কাহিনী, কল্প কাহিনী অধ্যয়ন করার চেষ্টা করেছি।

এই স্বল্প পরিসরে মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে আমার অধ্যয়নকৃত সব মতবাদ গুলো এখানে তুলে ধরা সম্ভব নয়।

তবে সাঁওতাল লোক বিশ্বাসে সৃষ্টিতত্ত্বটি আপনাদের কে না জানিয়ে পারছি না। সাঁওতাল লোক বিশ্বাসে সৃষ্টিতত্ত্বটি হলঃ

সৃষ্টির আদিতে পৃথিবী বলে কিছু ছিলনা, ছিল শুধু পানি আর পানি। একদিন চন্দ্রের কন্যা স্নান করতে এসে তার শরীরের ময়লা দিয়ে দু’টো পাখি তৈরী করল। তাদের একটির নাম হাঁস অন্যটি হাঁসিল।

তারা অনেক দিন ধরে পানিতে ভাসতে ভাসতে একদিন ঠাকুরজিউ অর্থাৎ ইশ্বরের কাছে খাবার চাইল। তখন ঠাকুরজিউ পৃথিবী সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন।

কিন্তু পৃথিবী সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন মাটি। মাটি কিভাবে যোগাড় করা যায়। ঠাকুরজিউ রাঘববোয়ালকে নির্দেশ দিলেন পনির নিচে থেকে মটি নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু বোয়াল দাঁতে করে মাটি নিয়ে আসতে গিয়ে মটি গলে গেল। বোয়ালের চেষ্টা ব্যর্থ হলো।

তারপর কাঁকড়াকে আদেশ করল কাঁকড়াও ব্যর্থ হলো। এরপর ঠাকুরজিউ কচ্ছপকে আদেশ করল কিন্তু কচ্ছপের চেষ্টাও সফল হলো না।

ঠাকুরজিউ সর্বশেষ আদেশ করলেন কেঁচোকে। কেঁচো মাটি আনতে রাজি হলো ঠিকই তবে ইশ্বরকে বলল “আমি মাটি আনব কিন্তু এ জন্য কচ্ছপকে পনিতে ভেসে থাকতে হবে।” ঠাকুরের নির্দেশে কচ্ছপ পানির উপর ভেসে থাকতে রাজি হলো।

অতঃপর কেঁচো তার লেজ কচ্ছপের পিঠের উপর রেখে মুখ দিয়ে মটি খেতে শুরু করল এবং লেজ দিয়ে তা বের করে দিতে লাগল। এভাবে কচ্ছপের পিঠের উপর মাটির স্তর জমতে জমতে পৃথিবী সৃষ্টি হলো। কিন্তু প্রথমে পৃথিবীর মাটি শক্ত ছিলনা। মটি শক্ত করার জন্য ঠাকুর পৃথিবীর উপর প্রথমে ঘাস, শাল মহুয়াসহ নানা বৃক্ষ রোপন করল।

কিছুদিন পর মেয়ে পাখিটা দুটো ডিম দিল। পুরুষ পাখিটা খাদ্যের অন্বেষণে বেরিয়ে পড়ল। নয় মাস পাঁচদিন পর ডিম থেকে একজন নারী এবং একজন পুরুষের জন্ম হলো। এদের নাম হলো পিলচু হাড়াম ও পিলচু বুড়ি। এরাই হলো পৃথিবীর আদি নর-নারী।

কি পাঠক আপনাদের অনুভুতি কি?  

যা হোক মহাবিশ্ব সৃষ্টি নিয়ে যখনই কোন আলোচনা হয়, একটি বড় প্রশ্ন সামনে উঠে আসে। আর তা হল মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে কি সত্যিই সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বরের হাত রয়েছে?

এই প্রশ্নে মহাবিশ্ব সৃষ্টির ধারণা নিয়ে বিজ্ঞানী এবং ধর্মবিশ্বাসীদের মাঝে তীব্র বিরোধ রয়েছে। আস্তিক এবং নাস্তিক দের মাঝে এ বিষয়টি নিয়ে যুক্তি তর্কের শেষ নেই।  

আসুন দেখি মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা কি বলেনঃ 
(পাঠক বাংলা ভাষায় এই বিষয়টি বর্ণনা করা বেশ কষ্ট সাধ্য, তারপরও আমি সহজ বোধগম্য শব্দচয়নে বিষয়টি উপস্থাপনের চেষ্টা করছি)

একটি বিন্দু থেকে সব কিছুর সৃষ্টি।

ধারনা করা হয় তখন মহাবিশ্বের আয়তন ছিল একটি পরমানুর থেকেও ছোট এবং তাপমাত্রা ছিল কয়েক বিলিয়ন ডিগ্রি সেন্ট্রিগেড। সেই ছোট বিন্দুটি হঠাৎ হারিয়ে ফেলে তার মহাকর্ষন শক্তি এবং প্রসারিত হতে থাকে অসীম গতিতে চারদিকে। এই প্রসারনকে বলা হয় বিগ বেং

বর্তমান জানা তথ্যের উপর ভিত্তি করে মহাবিশ্বের বয়স দাড়ায় ১৩৭ বিলিয়ন বছর এবং আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বের ব্যাস ১৮৫ বিলিয়ন আলোক বর্ষ।

কিন্তু পরমানুর থেকে ক্ষুদ্রতম এই আদি পরমানুর সৃষ্টি কোথা থেকে হলো তার সঠিক উত্তর এখনও মেলেনি।

কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর আলোকে বিশ্লেষণ করলে এর একটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কোয়াণ্টাম দোদুল্যমানতা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক ভাবেই শুন্য থেকে অবশ্যম্ভাবীরূপে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হতে পারে। কোয়াণ্টাম মেকানিক্সের সাহায্যে এটা প্রমান করা সম্ভব যে শূন্যতা(nothing) থেকেও কোনকিছুর (something) সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে কোয়াণ্টাম মেকানিক্স এর তত্ত্ব এবং আইনষ্টাইন এর জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি-র সাহায্য নিয়ে থাকেন। যদিও ধারণাগত দিক থেকে এই দুটি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী।   

এই দুই তত্ত্বের ব্যবধান কমিয়ে এবং একটি মাত্র তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে মহাবিশ্বের সৃষ্টির বর্ণনা করার জন্য বহুদিন যাবত চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা স্ট্রিং থিউরি (এম থিউরি) দিয়ে একটি কাল্পনিক ব্যাখা দাঁড় করাবার চেষ্টা করেছেন।

মহাবিশ্বের প্রতিটি পরমানুর ক্ষুদ্রতম অংশ হচ্ছে স্ট্রিং। পরমানু গঠিত ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রন এবং অন্যান্য কনিকা দিয়ে। আর প্রোটন, নিউট্রন ইত্যাদি তৈরি হলো কোয়ার্ক দিয়ে। আর কোয়ার্ক তৈরি স্ট্রিং দিয়ে। যার গঠন ও গতির উপর নির্ভও করে বিভিন্ন কোয়ার্কের বৈশিষ্ট্য।

স্ট্রিং হচ্ছে মূলত্ব কম্পনরত সুতার মত একটি অংশ বা বৃত্তাকার সুতা যা অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত হবার ক্ষমতা রাখে। আর অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত হবার পর একটি স্ট্রিং অপর স্ট্রিং এর সাথে যদি ঘটনা ক্রমে ধাক্কা খায়, তাহলে সৃষ্টি হতে পারে একটি মহাবিশ্বের, ধারনা করা হয় এরকম স্ট্রিং এর পারস্পরিক সংঘর্ষে সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মহাবিশ্ব, যার একটি হলো আমাদের মহাবিশ্ব।

ব্রিটিশ তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানী এবং কসমোলজিষ্ট স্টিফেন উইলিয়াম হকিং ১৯৮৮ সালে মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্য নিয়ে লেখা তার 'অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম' বইয়ে মহাবিশ্ব সৃষ্টির নেপথ্যে ঈশ্বরের ভূমিকা সরাসরি উড়িয়ে দেননি।

কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত তার 'দ্য গ্রান্ড ডিজাইন' বইটিতে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টিতে ঈশ্বরের কোনো ভূমিকা নেই বলে তিনি মত ব্যক্ত করেছেন।

মার্কিন পদার্থবিদ লিওনার্দ ম্লোডিনাও'র সঙ্গে যৌথভাবে লিখিত 'দ্য গ্রান্ড ডিজাইন' বইতে হকিং দাবি করেন, বিগ ব্যাং বিস্ফোরণ ছিল একটি অনিবার্য পরিণতি, যা পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মানুসারেই সংঘটিত হয়েছে।

হকিং তার নতুন বইতে বলেছেন, "শূন্যতা থেকেই অবশ্যম্ভাবীরূপে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হতে পারে, কেননা তাতে অভিকর্ষ শক্তির নিয়ম কার্যকর রয়েছে। স্বতঃস্ফূর্ত সৃষ্টি'ই এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির কারণ, আর সেকারণেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড টিকে আছে, আমরা টিকে আছি। আর মহাবিশ্ব সৃষ্টির এই প্রক্রিয়ায় ঈশ্বরের আলো জ্বালানোর কোনো প্রয়োজন নেই।"

সাম্প্রতিক এই মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে বোঝা যাচ্ছে, হকিং ধর্মীয় বিশ্বাসের সমান্তরালে আগে যে দৃষ্টিভঙ্গি হাজির করেছিলেন তা থেকে সরে এসেছেন। যদিও পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং- এর নতুন এই ধারণা সম্পর্কে সবাই একমত হতে পারেন নি।  

সোজা কথা হচ্ছে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র ধরে বা the laws of universe বা laws of nature এর উপর ভিত্তি করে। এর পেছনে সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বরের কোন হাত নেই।   

অভিকর্ষ আর মহাকর্ষ শক্তির নিয়ম? পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র? 

একদিকে প্রশ্ন জাগে,
এই নিয়ম গুলো কি ভাবে তৈরী হল? কে তৈরী করল? যার উপর ভিত্তি করে বিগ বেং রচিত হল?

অনেকে পর্যবেক্ষণ নীতি অনুসরণ করে এর ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যদিও এই ব্যাখ্যা গুলো সর্বজনগ্রাহ্য নয়।

আবার অন্যদিকে প্রশ্ন জাগে
সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছেন?”

স্রষ্টা এমন সত্তা যিনি সৃষ্ট নন, তিনি অস্তিত্বে আসনে নি এবং তিনি সৃষ্টিজগতের স্থান-কাল কাঠামোর অংশ নন ৷ আর এজন্যই তিনি অসৃষ্ট বা অবস্তু, ফলে তাঁর সৃষ্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই ৷ এজন্য স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছেন, এই প্রশ্নটিই অবান্তর ৷


কোনটি সঠিক আর কোনটি সঠিক নয়... কোনটি যুক্তিযুক্ত আর কোনটি যুক্তিযুক্ত নয়... এই যুক্তিতর্কে আমি যেতে চাই না।

নাস্তিকতার প্রচারক একজন বলেছেনআমি মানুষকে নাস্তিক হতে বলিনাতাদের যুক্তিমনষ্ক হতে বলি। যুক্তিমনষ্ক হলে মানুষ অটোমেটিক নাস্তিক হয়ে যাবে বলে উনি বিশ্বাস করেন।
অন্যদিকে যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেনতারাও যে যুক্তি ছাড়াই ঈশ্বরে বিশ্বাস করেনএই ধারণাটাও ভুল। একজন মানুষেরযেহেতু মানুষ স্বাভাবিকভাবেই যুক্তি নির্ভর চিন্তা করেপক্ষে যুক্তি ছাড়া কোন মতাদর্শ অনুসরণ সম্ভব নয়। অবশ্যই যুক্তির পথেই হাঁটতে হবে তাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে টিকে থাকার জন্যে।

পৃথিবীতে সবচেয়ে জঘন্য কুকর্মের পক্ষেও যুক্তি তৈরী করার মতো দুই-চার জন মানুষ পাওয়া যাবে। ইরাক যুদ্ধের মতো অনৈতিক যুদ্ধের পক্ষে যুক্তির প্রদর্শনীও দেখেছি আমরা।
আমার গ্রামের কাসেম ভাই বিশ্বাস করেন না যে চাঁদে মানুষ অবতরণ করেছে। উনাকে গ্রামের ছেলেরা যুক্তি দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করলোকিন্তু যেহেতু কাসেম ভাই এবং ছেলেদের কারো কাছেই যথেষ্ট জ্ঞান ছিলো নাতাই সকল বিতর্ক এবং যুক্তি ছিলো শ্রেফ তর্ক। কাসেম ভাই মারা গেছেন এই বিশ্বাস নিয়ে যেচাঁদে মানুষ যায়নি। লক্ষ্যণীয় যেকাসেম ভাই নিজেই স্বল্প জ্ঞানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেনএবং তার পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি তৈরীও করেছিলেন।

যুক্তি আসলে কোন পথ দেখায় নাএকটা পূর্বনির্ধারিত পথে টিকে থাকতে সাহায্য করে।

(এই লেখাটি কোন পাঠকের বিশ্বাসে বা অনুভুতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য নহে) 

No comments:

Post a Comment

Thank you for your time. I will get back to you soon.
Nathan