Sunday, May 20, 2012

কে জানে, হালুম ক'রে পড়ল যে কার ঘাড়ে...


পাঠক, আমার প্রতিটি লেখা মূলতঃ আমার অনুভুতি, অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণর উপর ভিত্তি করে লিখে থাকি।

আর সেই লেখার প্রাণ হল বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া আপনাদের জীবনের অভিজ্ঞতা, কল্পনা, অনুভুতিগুলো। মোটকথা আমার লেখাগুলো আপনাদের হাসি, কান্না আনন্দ আর আমার অনুভুতির মিশেল।

আপনাদের অনুভুতিগুলো আত্মস্থ করে লেখনিতে প্রকাশ করতে গিয়ে প্রায় সময়ই অশ্রু আপন আবেগেই গড়িয়ে পড়ে। আবেগের অশ্রুকে বাগে আনার বৃথা চেষ্টা আমি কখনও করি না।

কিন্তু বিবেকের তাড়নায় আমার লেখনী বন্ধ করতেও পারি না। 


সম্প্রতি আমারই খুব কাছের এক বন্ধু তার একান্ত কিছু অনুভুতি আমার সাথে ভাগাভাগি করে। আমি আমার সীমিত জ্ঞান দ্বারা যতটুকু সম্ভব তার  মানসিক শক্তি যোগানোর চেষ্টা করেছি। জানি না এতে সে কতটুকু মানসিকভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছে... 

তবে সে আমার মনোজগতে একটি চিন্তার বীজ বপন করে দিয়ে গেছে। আর তারই ফলস্বরূপ আজকের এই লেখাটির অবতারণা।
সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে পারিবারিক কলহ এবং এর পরিণতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে আমাদের খ্রিষ্টান সমাজের পরিবার গুলোর মাঝে। যা সত্যিই উদ্বেগজনক। 
বিষয়টি নিয়ে আমার ভাবনার শুরু বেশীদিনের নয়। বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে চিন্তার শাখা প্রশাখা আমার মাঝে বিস্তার লাভ করার সাথে সাথে আমি এর প্রকৃত স্বরূপ বোঝার চেষ্টা করেছি।

আমার নিজের কপালে বিবাহ বিচ্ছেদের তিলকটি এখনও না পড়াতে, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ঝুলিতে এই বিষয়টি এখনও অন্তর্ভুক্ত হয় নি। 

এই অসম্পূর্ণতার পরিপ্রেক্ষিতে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে, আমি দ্বারস্থ হয়েছিলাম এই কঠিন সময় অনুভুত হওয়া কয়েকজনের সান্নিধ্যে পেতে। 

একটি ঘটনা শুনুন... ( বরাবরের মত এই গল্পের চরিত্রগুলোও কাল্পনিক...)

একটি খ্রিষ্টীয়ান পরিবার। সদা হাস্যময়ী স্ত্রী কে নিয়ে ছেলেটির সুখের সংসার। মেয়েটি বিয়ের আগে একটি চাকুরী করত। কিন্তু বিয়ের পর সংসারের কথা ভেবে সে চাকুরিটী ছেড়ে দেয়।

ছেলেটিকে সবসময় ব্যস্ত থাকতে হয় নিজের কাজে। মেয়েটিও ব্যস্ত সারাদিন সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম নিয়ে।

ছেলেটিকে কাজের প্রয়োজনে প্রায়ই ঢাকার বাইরে এমনকি দেশের বাইরে যেতে হয়। কিছুদিন হল ছেলেটি দেশের বাইরে গিয়েছে নিজের কাজে।

কিন্তু এরই মাঝে হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় একটি টেলিফোন এল। অপর প্রান্ত থেকে নিজের পরিচয় গোপন রেখে একজন খবর দিল যে, ছেলেটি দেশের বাইরে গিয়েছে অন্য এক মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে।

মেয়েটি এই খবরটি পাওয়ার পর ছেলেটির পরিবারকে জানায়... খবর পাওয়ার সংগে সংগে ছেলেটির আত্মীয় স্বজন ধরে নিলেন এটা তাদের ছেলেকে বিপদে ফেলার জন্য কেউ ফন্দি করেছে।

ছেলেটিকে ফোন করা হল এবং তাকে পরিবার থেকে এই ঘটনাটি বিস্তারিত জানিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হল এই বলে যে “আমাদের সম্মানহানির জন্য আমাদের পিছনে শত্রু লেগেছে”।

পরবর্তিতে প্রকাশ পায় যে, ছেলেটি সত্যিই একটি মেয়েটিকে বিয়ে করে মধুচন্দ্রিমা করতে ভারতে গিয়েছিল। মেয়েটি অন্য ধর্মাবলম্বী। ছেলেটি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তিতে স্বীকার করতে বাধ্য হয়।

পরের ঘটনা এই, আইনবিদ এর উপস্থিতিতে চুক্তিপত্র সম্পাদনের মাধ্যমে ছেলেটি বড় অঙ্কের অর্থ প্রদান পূর্বক তার প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়।

উপরোক্ত ঘটনাটি আমাদের সমাজে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার মধ্যে একটি। 

ঘটনাটি পড়ে শত কোটি প্রশ্নের উদয় হওয়া স্বাভাবিক। এরা কারা? ঘটনাটি কেন ঘটল? স্বামী এবং স্ত্রীর মাঝে কি কোন সমস্যা ছিল? গন্ডগোল করে একসাথে থাকার চেয়ে এটাই ভাল হয়েছে... ইত্যাদি ইত্যাদি...

কোন ঘটনা বিচার এবং বিশ্লেষণে যে প্রশ্নগুলো সাধারণত আমাদের মনে উদিত হয়, তা আমাদের নিজস্ব নিজস্বতা থেকে। আমাদের প্রশ্নের ধরণগুলো যেমন ভিন্ন হয় আমাদের কল্পিত সমাধান গুলোও হয় ভিন্নতর।

আবার এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই, কোন দুর্ঘটনা নিজের জীবনে বা খুব কাছের কারও জীবনে ঘটলে আমরা যে দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করি... অন্যদের জীবনে সেই একই ধরণের ঘটনা বিবেচনায় আমাদের দৃষ্টীভঙ্গির বিভিন্নতা দেখা যায় প্রায়শই।

এই লেখাটিতে আমি উপরোক্ত ঘটনাটির শেষ অধ্যায়টি নিয়ে আলোকপাত করতে চাই।

আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি, বড় অঙ্কের অর্থ প্রদান পূর্বক ছেলেটি তার প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়।

বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যটি সম্পাদন করার পর ছেলের পরিবারের গুরুজনদের মাঝে সম্মান রক্ষার একটি ব্যাপার চলে আসে। সম্মান রক্ষার অভিনব পদ্ধতি হিসাবে তারা প্রচার শুরু করেন সমস্ত কিছু আইন মেনে সম্পাদন করা হয়েছে।

মেয়ের অনুমতি নিয়েই সব করা হয়েছে। মেয়েকে ঠকানো হয়নি। মেয়ের অধিকার রক্ষা করা হয়েছে। যদিও তাদের কাছে এই প্রশ্নের কোন উত্তর ছিল না, কি ভাবে মেয়ের অধিকার রক্ষিত হয়েছে।     

খ্রিষ্টান সমাজের বেশ কয়েকজন নারী নেতৃ ধিক্কার দিয়ে বলেন “মেয়েটি টাকার লোভে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েছে”। ছেলেটির বিরুদ্ধে মামলা করা যেত। আমরা সমস্ত সাহায্য করতে পারতাম। যদিও সেই নেতৃদের অনেকেই এই ঘটনাটি বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার আগে থেকেই অবহিত ছিলেন। কিন্তু নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে সাহায্য করার প্রয়োজন অনুভব করেন নি।

খ্রিষ্টীয় সমাজ এবং  ধর্মীয় নেতা-নেতৃগন এই ঘটনার পর বলতে শুরু করেন, খ্রীষ্টীয়ান ধর্মীয় আইন অনুযায়ী এই ধরণের বিবাহ বিচ্ছেদ গ্রহনযোগ্য নয়। এটা ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে শয়তানের কাজ। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য এই নেতা-নেতৃগনের অনেকেই এই ঘটনাটির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।

এই ঘটনার সাথে জড়িত আইনবিদরা দুটি শব্দ বেছে নিলেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য, শব্দ দুটি হচ্ছে “mutual understanding” বাংলা করলে যার অর্থ দাঁড়ায় “পারস্পরিক সমঝোতা”। তারা বলতে শুরু করেন সব কিছু আইনসিদ্ধ ভাবে “mutual understanding” এর ভিত্তিতে করা হয়েছে।  

সাধারন দৃষ্টিকোণ থেকে উপরোক্ত ঘটনাটি বিশ্লেষণ করলে প্রথমত যে প্রশ্নগুলো আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায় তা হল:

? মেয়েটি কি আইনি লড়াই করতে চেয়েছিল? আইনি লড়াইয়ের ব্যাপারে ছেলের পরিবারের পক্ষ থেকে সাহায্যের কোন আশ্বাস কি মেয়েটি পেয়েছিল?

? আইনি লড়াই না করে এই ঘটনাটি মেনে নিতে মেয়েটির উপর কি কোন চাপ বা হুমকি প্রদান করা হয়েছিল ছেলের পরিবারের পক্ষ থেকে? যার ফলশ্রুতিতে মেয়েটি mutual understanding এর নামে লিখিত চুক্তিতে স্বাক্ষর প্রদান করতে বাধ্য হয়? 

? কোন কিছু বাধ্য হয়ে মেনে নেওয়া আর mutual understanding কি একই অর্থ বহন করে?

? ছেলেটির পরিবার কি ছেলেটির এই ইচ্ছাকৃত অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিল? নাকি mutual understanding - এর নামে অর্থের বিনিময়ে ছেলেটির অন্যায় কে আড়াল করাই ছিল ছেলেটির পরিবারের মূল লক্ষ্য? যদি তাই হয় তাহলে mutual understanding - এর নামে অর্থের বিনিময়ে সম্পাদিত এই চুক্তি নৈতিকভাবে কতটুকু গ্রহনযোগ্য?

?মেয়েটি কি সত্যিই টাকার লোভে পড়ে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েছে?

? অন্যায় করেও অর্থের বিনিময়ে mutual understanding -এর নামে রক্ষা পাওয়ার এক অভিনব পন্থা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে কি উদাহরণ হিসাবে তুলে দেওয়া হল এই ঘটনার মাধ্যমে?

জানতে ইচ্ছা করে বিবাহের সময় সবাই mutual understanding  এর মাধ্যমে চার্চ এ গিয়ে ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুশাসন অনুযায়ী বিয়ে করে, কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদের সময় কেন ধর্মকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার এই প্রচেষ্টা। 

আসুন দেখি বাইবেলে বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে কি লেখা আছে...

ঈশ্বর যাহাদের যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক...। যে কেহ আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া অন্যাকে বিবাহ করে, সে তাহার বিরুদ্ধে ব্যভিচার করে; আর স্ত্রী যদি আপন স্বামীকে পরিত্যাগ করিয়া আর এক জনকে বিবাহ করে, তবে সেও ব্যভিচার করে...। মার্ক ১০:৯,১১,১২

আর বিবাহিত লোকদের এই আজ্ঞা দিতেছি- আমি দিতেছি তাহা নয়, কিন্তু প্রভুই দিতেছেন- স্ত্রী স্বামীর নিকট হইতে চলিয়া না যাউক- যদি চলিয়া যায়, তবে সে অবিবাহিত থাকুক, কিম্বা স্বামীর সহিত সম্মিলিতা হউক- আর স্বামীও স্ত্রীকে পরিত্যাগ না করুক...। ১ করিন্থীয় ৭:১০

আর আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, ব্যভিচার দোষ ব্যতিরেকে যে কেহ আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া অন্যাকে বিবাহ করে, সে ব্যভিচার করে; এবং যে ব্যক্তি সেই পরিত্যক্তা স্ত্রীকে বিবাহ করে, সেও ব্যভিচার করে...।  মথি: ১৯:৯ এখানে উল্লেখ্য যে ব্যভিচার (Sexual immorality i.e.. Adultry) শব্দটির উৎপত্তি গ্রীক porneia থেকে যা থেকে ইংরেজী pornography শব্দটির উৎপত্তি।

তথাপি অবিশ্বাসী যদি চলিয়া যায়, চলিয়া যাউক... ১ করিন্থীয় ৭:১৫

বাইবেলের পুরাতন এবং নতুন নিয়মে আরও বহু অংশে বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। 

কিন্তু অর্থের বিনিময়ে  mutual understanding এর উপর ভিত্তি করে বিবাহ বিচ্ছেদের কোন নির্দেশনা আমার দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। 

তবে শুনেছি খ্রীষ্টানদের জন্য বিবাহ বিচ্ছেদের বাংলাদেশীয় যে আইন রয়েছে তাতে ধর্মকে পাশ কাটিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের সুযোগ রয়েছে।

আমি আইনবিদ নই তাই আইনের ব্যবচ্ছেদ করা আমার কর্ম নয়। তারপরও খ্রীষ্টিয়ানদের জন্য লিখিত বিবাহ বিচ্ছেদের বাংলাদেশীয় আইনগুলো আমি মনোযোগ সহকারে পড়েছি। কিন্তু mutual understanding এর মাধ্যমে কিভাবে বিচ্ছেদ ঘটানো হবে বা mutual understanding এর মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদের পূর্বশর্ত গুলো কি হবে তা বুঝে উঠতে পারি নি।

অপারগ হয়ে mutual understanding এর মাধ্যমে সফলভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানো এক আত্মীয়ের সাথে কথা বললাম। কিন্তু উনিও সঠিক কোন উত্তর দিতে পারলেন না। উনি বললেন এটা উকিল বলতে পারবে।

সাধারন অর্থে mutual understanding means sympathy of each person for the other.

Mutual understanding এর মাধ্যমে  বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে দু'পক্ষেরই শক্ত ভিত্তি থাকা আবশ্যকীয়।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় কোন অন্যায় বাধ্য হয়ে মেনে নেওয়া আর mutual understanding কি একই অর্থ বহন করে?

ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠি তো ঘটনা বিবেচনায় পৃথক হতে পারে না।

তবে ইহা অনস্বীকার্য যে জীবনের পরিক্রমায় বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সময় দাম্পত্য জীবন এমন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে যে বিবাহ বিচ্ছেদ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। স্বামী- স্ত্রী দু’জনেরই সমস্যা এবং এর পিছনে দু’জনেরই যুক্তিযুক্ত প্রমাণ থাকার কারণে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে পরিবারের সম্মতিক্রমতে এই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানোতে বিরোধীতা কারও কাম্য নয়।

কোন কোন ক্ষেত্রে যথেষ্ট যুক্তি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ বছরের পর বছর ঝুলে আছেন, কিন্তু কোন সমাধানে এখনো পৌঁছুতে পারেন নি। অনেকে আবার প্রমাণের অভাবে এবং সমাজের ভয়ে দুঃসহ দাম্পত্য জীবন মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন, এই পরিস্থিতিও কারও কাম্য নয়। 

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই পদ্ধতির অপপ্রয়োগ নিয়ে। অনেক পরিবার এই বিষয়টি ভালভাবে না বোঝার কারণে mutual understanding-এর ফাঁদে পড়ে সব হারাচ্ছেন বা হারাতে চলেছেন।

ইদানিং দেখা যাচ্ছে অনেকে তাদের হীন স্বার্থ চরতার্থ করতে, নিজেদের অনৈতিক কার্যকলাপ কে আড়াল করতে বা অনৈতিক সুপ্ত ইচ্ছার বাস্তব রূপ দিতে এই পদ্ধতির আশ্রয় নিচ্ছে বা নেওয়ার চেষ্টা করছে।   


উপরে বর্ণিত ঘটনাটি তারই একটি বাস্তব উদাহরণ।

একপক্ষ নিজের অনৈতিক সম্পর্কের বলি করছে অপর পক্ষকে। নিজের অনৈতিক কার্যকলাপের পথ সুগম করার লক্ষ্যে অপরপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করে mutual understanding  এর মাধ্যমে ডিভোর্স দিচ্ছে বা দেওয়ার পায়তারা করছে। 

এই সব একপাক্ষিক ঘটনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কঠিন কাজটি হচ্ছে mutual understanding -এ অন্যপক্ষকে রাজী করানো।

অপর পক্ষকে mutual understanding -এ রাজি করানোর জন্য পারিবারিক চাপ প্রয়োগ, হুমকি প্রদান এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে আইনের ভয়ও দেখানো হচ্ছে।

অনেক ক্ষেত্রে সন্তানকে জিম্মি করে mutual understanding এ রাজী করানোর অপচেষ্টাও করা হচ্ছে।

এই ধরণের ঘটনার ক্ষেত্রে কিছু উক্তি অনেকের মুখে প্রায়ই শোনা যায়। তা হচ্ছে " মন উঠে গেলে কি করবে... বা... সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে জোর করে জোড়া লাগানো সম্ভব না... বা... জোর করে একসাথে থাকার কোন মানে হয় না।"

কোন কোন ক্ষেত্রে কথাটি খুবই সত্যি।

কিন্তু উপরোক্ত ঘটনাটি বিবেচনায়, প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত  অনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে  কেউ যদি "মন উঠে গেছে বলে" সমঝোতার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদের দাবী তোলে তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? ... তাই বলে কি অন্যায়কারির অন্যায় বা অনৈতিক সম্পর্কটি মেনে নিতে হবে? আর সারাজীবন হৈমন্তী শুকলার সাথে কন্ঠ মিলিয়ে "আমার বলার কিছু ছিল না..." গানটি যপে জীবন নদীতে বৈঠা মারতে হবে!!! 

যাক যা হয়ে গেছে তা নিয়ে কথা বলেছি অনেক। এবার আসুন একটু সামনের দিকে তাকাই...  

আসুন আমরা আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করি । সমাজে নিজেদের দায়িত্ব পালনে আরও সচেষ্ট হই। নিজের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করা থেকে বিরত থাকি। অন্যকে বিশেষ করে সন্তানদের বঞ্চিত না করি।

আমাদের নিজেদের স্বার্থপরতার কারণে আর কোন মেঘ বালিকার জীবনে যেন ঘোর অমানিশা নেমে না আসে।

Mutual understanding বা “পারস্পরিক সমঝোতার” ভিত্তিতে পরিবার না ভেঙ্গে পরিবার গঠনে সচেষ্ট হই।

চলুন আজ থেকেই আমরা আমাদের চেষ্টা শুরু করি... তা না হলে কে জানে বিচ্ছেদের বার্তা নিয়ে mutual understanding নামক জুজুবুড়ী হালুম ক'রে যে কার ঘাড়ে কখন এসে পড়বে তার কোন ঠিক নেই।

প্রশ্ন উঠতে পারে সমাজে এই ধরণের ঘটনা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে আমরা কি পদক্ষেপ নিতে পারি...  প্রথম আলো ব্লগে প্রকাশিত আমার  লেখাটি বিস্তারিত পড়ুন... বিস্তারিত

2 comments:

  1. লেখাটি নিয়ে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক মূল্যায়ন পাচ্ছি। সময় নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  2. Linda Mary SarkerMay 23, 2012 at 4:04 AM

    Likhati pore amar understaing hochhe: amra onnay kore jemon taka die opor pokhher mukh bondho rakhi 'mutual understanding' shobdoti amar kache temni ekti sho nirmito Fotwa. byaparta erokom toke taka die dilam tor chahidamoto, tui amar onnay shomajer kache prokash korish na aar tortao ami bolbo na. Je taka nieche she to nij daittei chhup thakbe loke jodi 'mondo' lovee bole??!! Eta ki ghush (bribe) noy?

    ReplyDelete

Thank you for your time. I will get back to you soon.
Nathan