Saturday, April 28, 2012

Fountain pen Vs Disposable ball pen

 
ময়মনসিংহ শহরের ভিক্টোরিয়া মিশন প্রাইমারী গার্লস স্কুলে আমার ছাত্রজীবনের শুরুএই স্কুলের অনেক গুলো অবাক করার মত নিয়ম ছিল। তার মধ্যে একটি হল, গার্লস স্কুল বিধায়, খ্রীষ্ট ধর্ম ব্যতীত অন্য যে কোন ধর্মের ছেলেরা ৩য় শ্রেনী পর্যন্ত এই স্কুলে লেখাপড়া করতে পারত। তৃতীয় শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর শুধু খ্রীষ্টান ছেলেরা ৪র্থ এবং ৫ম শ্রেণী পর্য্যন্ত লেখা পড়া করতে পারত।
আমি তৃতীয় শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর আমার অন্য ধর্মাবলম্বী বন্ধুরা এই স্কুল ছেড়ে চলে যায়। আমরা মাত্র ৪ জন খ্রীষ্টান ছেলে রয়ে যাই। আর তখন আমাদের ক্লাসে মেয়েদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০ জন।

শিক্ষা ক্ষেত্রে ধর্ম এবং লিঙ্গ ভিত্তিক বিভাজনের কি চমৎকার এক উদাহরণ।  

ঐ সময়ে লেখার কাজে সাধারনত ফাউণ্টেন পেন ব্যবহারের প্রচলন ছিল। এখনো আমার মনে পড়ে ইয়োথ (Youth) কোম্পানির ফাউণ্টেন পেন এবং কলমের কালি তখন খুব জনপ্রিয় ছিল।

ফাউণ্টেন পেন ব্যবহারের জন্য কালির দোয়াত সঙ্গে রাখতে হত কালি শেষ হয়ে গেলে কিছুক্ষন কলমটা ঝাঁকাঝাঁকি করে কালি বের করার আপ্রান চেষ্টা করা হত। এই কলম ঝাঁকাঝাঁকির ব্যাপারটা লিখে বোঝানো যাবে না। যারা এই কলম ব্যবহার করেছেন তাদের সেই ঝাঁকাঝাঁকির অনুভুতি আমার এই লেখা পড়ার মুহুর্তেই শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। অবশেষে ব্যর্থ হলে কালির দোয়াত থেকে কালি ভরতে হত। এই কলমের কালি আবার বিভিন্ন রং এর পাওয়া যেত।  

মাঝে মাঝে এই কলম বিশেষ কায়দায় গরম পানি দিয়ে পরিস্কার করতে হত। ঠিকমত লেখা না হলে বিশেষ কায়দায় ব্লেড দিয়ে এর নিপের সংযোগ স্থল পরিস্কার করতে হত।
এই কলম নষ্ট হয়ে গেলে মেরামত করা যেত।

এই কলমকে খুবই আদর যত্নের সহিত রাখতে হত। এক একটি কলম বছরের পর বছর একজন ব্যবহারকারির প্রতিদিনের সঙ্গি হয়ে থাকত। পরীক্ষার সময় একাধিক কলম নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করলেও প্রতিদিনের ব্যবহৃত কলমটি লেখার ব্যাপারে প্রাধান্য পেত।
এরই মাঝে Disposable (one time use and throw) ধারনা নিয়ে এক ধরনের বল পয়েন্ট পেন বাজারে আসা শুরু করল। এই নুতন ধরনের কলমের আগমনের ফলে আস্তে আস্তে ফাউণ্টেন পেন তার বাজার হারাতে শুরু করল। ব্যবহারকারিরাও আস্তে আস্তে ফাউন্টেন পেন এর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল।   

প্রথম যে Disposable বল পয়েন্ট পেন বাজারে আমি দেখেছি তার কোম্পানীর নাম ছিল ইকোনো (ECONO)আমার এখনো মনে পড়ে এই কলমটির একটি এ্যাড এর গান খুবই জনপ্রিয় ছিল ঐ সময়ে। এর সুর সহ কথা গুলো এখনো আমার মনে আছে...কথাগুলো ছিল...

“আম্মুর জন্য ইকোনো, আব্বুর জন্য ইকোনো, আমার জন্য ইকোনো, সবার জন্য ইকোনো...”

Disposable বল পয়েন্ট পেন ব্যবহার ঐ সময়ে খুব আনন্দের ব্যাপার ছিল। কারণ একটি কলম শেষ হলেই নুতন আর একটি কলম পাওয়া যেত। নুতনের প্রতি মানুষের আকর্ষন তো চিরাচরিত। নুতন কলম পাওয়ার আশায় অনেকে আবার খুব তাড়াতাড়ি অযথা আঁকাআঁকি করে কলমের কালি শেষ করে ফেলত।
আমাদের জীবনকে আরও উপভোগ্য করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরণের Disposable পণ্যে বাজার সয়লাব হয়ে গেল। আমরাও সানন্দে গ্রহণ করলাম এই ধরনের পণ্যকে। আস্তে আস্তে আমাদের জীবন যাপনের একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠল এই ধরনের হালকা এবং সস্তা পণ্য গুলো।

চটের জায়গা দখল করে নিল পলিথিন এবং প্লাষ্টিক। এখন খুব কম পণ্যই বাজারে পাওয়া যায় যা পুনঃব্যবহার বা দীর্ঘদিন ব্যবহার করার চিন্তাভাবনা থেকে তৈরি করা হয়। এর পিছনে ব্যবসায়িক একটি দিক রয়েছে।
Disposable পন্যের ব্যবসায়িক দিক বা এর ব্যবহারের উপকারিতা বা অপকারিতা আলোচনা করা আমার এই লেখার বিষয় নয়।

আমি উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে, জীবনকে আরও উপভোগ্য করার উদ্দেশ্যে যে disposable ধারনা আমাদের মাঝে প্রবেশ করেছে, এখন তা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে।

আমাদের চিন্তা ধারা, দৈনন্দিন জীবন যাপন, আচার আচরন, পারষ্পরিক সম্পর্ক সবকিছুই  Disposable পন্যের মত হয়ে যাচ্ছে।     

আজ মানুষ মানুষকে ব্যবহার করছে নিজের স্বার্থে। উপরে ওঠার সিঁড়ি হিসাবে। স্বার্থসিদ্ধি হয়ে গেলে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে ভাগাড়ে।

বর্তমানে অনেকেই স্বল্প সময়ের পরিচয়ে disposable relationship গড়ে তুলছে। যা মূলতঃ পারষ্পরিক সমঝোতার সম্পর্ক। যেখানে ভালবাসা বা নৈতিকতার স্থান নেই। পরষ্পরের চাহিদা পূরণ হলেই একে অপরকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু ফেলে রেখে যাচ্ছে তাদের এই ক্ষনস্থায়ী ভালবাসাহীন পারষ্পরিক সমঝোতার সম্পর্কের ফসল। কি এদের ভবিষ্যত?

সম্পর্ক এখন এমন হয়ে গেছে। ইচ্ছা হল তো ভেঙ্গে দিলাম। সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায় বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমান বেড়ে যাচ্ছে ব্যাপক হারে।

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝে সহনশীলতা, ভালবাসার গভীরতা কমে যাচ্ছে। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি হলেই তারা নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করার পরিবর্তে বহির্মুখি হয়ে পড়ছে এবং নৈতিকতা বিবর্জিত কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে মানসিক শান্তি পাবার আশায়।

অনেক ক্ষেত্রে তারা বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়ছে। সমাজের কিছু মানসিক বিকারগ্রস্ত মানুষ সহমর্মিতা দেখানোর উসিলায় Disposable relationship গড়ে তুলছে। পরবর্তিতে যা চরম সর্বনাশ ডেকে আনছে পরিবার গুলোতে। 

বৈবাহিক সম্পর্কে  সমস্যা দেখা দিলে একে অপরকে Disposable পন্যের মত ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে একাকিত্ব অথবা নুতন সম্পর্কের দিকে অগ্রগামী হওয়াকে অনেকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

আমাদের নৈতিক শিক্ষা গুলোও দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। “ক্ষমা মহৎ গুন” কথাটি তো এখন Archive এ চলে গেছে। সব যেন প্লাষ্টিক হয়ে গেছে।

বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রোবট এর মাঝে কিভাবে আবেগ অনুভুতির স্ফুরণ ঘটানো যায়। হয়ত তারা এতে সাফল্যও পাবেন অদূরভবিষ্যতে। কিন্তু ততদিনে দেখা যাবে মানুষের হৃদয় থেকে আবেগ, অনুভুতি, সহযোগিতা, সহমর্মিতা এই বিষয় গুলো সব কর্পূরের মত হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। মানুষ গুলো রোবটের মত আচরন করছে আর রোবটগুলো তা দেখে হাসাহাসি করছে।

প্রশ্ন রইল... Fountain pen না  Disposable ball pen... আপনার জীবনে আপনি কোনটি চান?

কলম দিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম রোবট দিয়ে শেষ করলাম। কেন? আশা করি বুঝতে পেরেছেন...!!!

Friday, April 27, 2012

বিড়ালের ফেসবুক একাউন্ট

বিশ্বাস করুন আর নাই করুন নীচের ফেসবুক একাউন্টটি বাস্তবিকই একটি বিড়ালের জন্য খোলা হয়েছে।...এবার ল্যাও ঠেলা...!!


Thursday, April 26, 2012

Bull shit!

এই গল্পটা আপনাদের সবারই জানা। কিন্তু এই গল্পটিতে ভিটামিনের পরিমান এতই বেশি যে বারবার বলিলেও এর পুষ্টিগুণ বিন্দুমাত্র কমে না।
গল্পটার একটা ইংরেজি নামও দেওয়া হইয়াছে। Bull shit! 

বাংলায় অনুবাদ করিলে ইহার আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায় Bull অর্থ "ষাঁড়" বা "বৃষ" এবং "shit" অর্থ "বিষ্ঠা"। কাজেই শব্দ দুইটি  পাশাপাশি বসাইলে ইহার আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায় ষাঁড়ের বিষ্ঠা। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে আমরা আদর করিয়া ইহাকে গোবরবলিয়া ডাকিয়া থাকি। যদিও এর অন্য অর্থ রহিয়াছে। 
আমাদের বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের ভাষণের মত মূল কথা না বলিয়া ভূমিকা মানে গল্পের নামকরন নিয়া অনেক তেলেসমাতি দেখাইলাম। এইবার মূল গল্পে আসি।
একদা এক ষাঁড় মনের সুখে মাঠে ঘাস খাইতেছিল। ষাঁড়টির পিঠে একটা বুড়া পাখি বসিয়া পিঠের পোকামাকড় গুলা ঠোঁকরাইয়া নিজ দায়িত্বে সাবাড় করিতেছিল।
হঠাৎ পাখিটি মনের দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়া দু:খ করিয়া মাঠের শেষ প্রান্তের বড় বটগাছটা দেখাইয়া বলিতে লাগিল, আমার যখন যৌবন ছিল আমি উড়িয়া ঐ বটগাছটার সবচাইতে উঁচু ডালটায় বসিয়া মনের আনন্দে গান গাহিতে পারিতাম। আর এখন বুড়া হইয়া যাওয়াতে গাছটার সবচাইতে নীচের ডালটাতেও চড়িতে পারি না।
ষাঁড়টি এই কথা শুনিয়া হাসিয়া উঠিল, সে পাখিটিকে বলিল দু:খ করিও না, এর একটা সহজ সমাধানআমার জানা আছে। তুমি শুনিতে চাহিলে আমি বলিতে পারি। এই কথা শুনিয়া পাখিটি তাহার সমস্যার সহজ সমাধান শুনিবার জন্য আকুল হইয়া উঠিল এবং বার বার বিজ্ঞ  ষাঁড় মহাশয়কে অনুরোধ করিতে লাগিল।
ষাঁড়টি তখন পাখিটিকে বলিল, তুমি যদি প্রতিদিন আমার বিষ্ঠা নির্দিষ্ট পরিমান আহার করিতে পার তাহা হইলে ইহার ভিটামিনের গুণে ৭ দিনের মধ্যে তুমি ঐ বটগাছটার সবচেয়ে উঁচু ডালটায় আরোহন করিতে পারিবে।
এই কথা শুনিয়া পাখিটি প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে ষাঁড়ের বিষ্ঠা আহার শুরু করিল এবং দিন গুনিতে লাগিল।
তিনদিন ষাঁড়ের বিষ্ঠা আহার করিবার পর পাখীটি বুঝিতে পারিল ষাঁড়ের বিষ্ঠা আহার করিবার ফলে তাহার স্বাস্থ্য আগের চাইতে একটু ভাল হইয়াছে। তাহার চেহারাতেও একটা তৈলাক্ত ভাব আসিয়াছে। শরীরের বলও বৃদ্ধি পাইয়াছে।
সে চিন্তা করিল তিনদিন তো হইয়া গেল, দেখি না আজ কতটুকু উড়িতে পারি। সে ওড়া শুরু করিল। উড়িয়া সে গাছটির মাঝামাঝি একটি ডালে বসিতে সক্ষম হইল। পাখিটি সেই ডালে বসিয়া কিছুক্ষন মনের সুখে গান করিল, তারপর আবার নামিয়া আসিল।
এইভাবে সাতদিন সে ষাঁড়ের নির্দেশনা অনুযায়ি বিষ্ঠা আহার করিল।
আজ সেই মহেন্দ্রক্ষন। সাতদিন ষাঁড়ের বিষ্ঠা আহার করিবার ফলে পাখিটি বেশ মোটাতাজা হইয়া উঠিয়াছিল।
সে ষাঁড়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়া গাছটির সবচেয়ে উঁচু ডালটায় বসিবার আশায় উড়িতে শুরু করিল। উড়িতে উড়িতে পাখিটি ষাঁড়ের বিষ্ঠার ভিটামিনের গুণে গাছটির সবচেয়ে উঁচু ডালে পৌঁছাইতে সক্ষম হইল। পাখিটি সেই ডালে বসিয়া মনের সুখে গান গাহিতে লাগিল এবং আশে পাশের পৃথিবীটা অবলোকন করিতে লাগিল।
ঐ মাঠের পাশেই ছিল এক কৃষকের বাড়ি। সেই কৃষক গায়ে তৈল মর্দন করিয়া বাড়ির উঠানে আরাম কেদারায় বসিয়া রোদ হইতে ভিটামিন আহরণ করিতেছিল।
হঠাৎ সে দূর হইতে দেখিতে পাইল তাহার বাড়ির সামনের বড় বটগাছটার মাথায় একটা নাদুস নুদুস পাখি বসিয়া আছে। পাখিটির শরীর স্বাস্থ্য দেখিয়া তাহাকে ভক্ষন করিবার অভিপ্রায়ে কৃষকের চোখ লোভে চকচক করিয়া উঠিল। কৃষক তাহার বন্দুকটি আনিয়া একগুলিতে পাখিটিকে মারিয়া ফেলিল।         
গল্পটি পড়িয়া এর শানে নুজুল কি কিছু বুঝিতে পারিলেন?
...Many times even bull shit can get you to the top but never lets you stay there...

শতকরা শুণ্য -0=0=+0

মানুষের জীবনে এমন কিছু মুহুর্ত আসে যখন সুখ দু:খ কোন কিছুই আর তাকে স্পর্শ করে না। সব কিছুর স্বাদ একই রকম মনে হয়। একটা স্থবির অনুভুতি।

আমারও মাঝে মাঝে এই ধরনের অনুভুতি হয়। কোন কিছুই আমার স্থবিরতা কে দূর করতে পারে না। আনন্দ বা দু:খ কোন কিছুই আমাকে স্পর্শ করে না। তখন মনে হয় প্রতিদিন একটু একটু করে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছি।

প্রশ্ন জাগে... মানুষ কি পঞ্চইন্দ্রীয় বিশিষ্ট একটি আবদ্ধ বাক্স মাত্র? এই পঞ্চইন্দ্রীয় দ্বারা মানুষ কি তার চারিদিকের বাস্তবতাকে সত্যিকার অর্থে দেখতে, বুঝতে বা অনুভব করতে পারছে?

তাহলে...
কেন মানুষ প্রজাপতি বা মৌমাছির মত 10-9মি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অতিবেগুনী রশ্মি দেখতে পারে না? মানুষের এই অক্ষমতার কারণে ফুলের প্রকৃত রং বা সৌন্দর্য তাদের চোখে ধরা দেয় না।

কেন মানুষ ২০-২০,০০০হার্টজ এর নীচে বা উপরে কোন শব্দতরঙ্গ শুনতে পায় না? যা একটি মশা বা কুকুর পারে।

কেন ঈগলের মত তীক্ষ্ন দৃষ্টি মানুষের নেই।  
কেন রাতের অন্ধকারে মানুষ কিছুই দেখতে পারে না, যা প্যাঁচা বা বিড়াল পারে?

কেন মানুষ, বাদুরের মত প্রতিধ্বনি অনুধাবন করে খুব সহজেই রাতের আঁধারে কোন কিছুর অবস্থান নির্ণয় করতে বা ঘুরে বেড়াতে পারে না?

কেন কুকুরের ঘ্রানশক্তি মানুষের চেয়ে ১,০০০ থেকে ১০,০০০,০০০  গুণ বেশী? 
কেন হাতি তিন মাইল দূরত্ব থেকে পানি কোথায় পাওয়া যাবে তা বুঝতে পারে, মানুষ পারে না?  

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে আরও একটি ইন্দ্রিয়ের কথা প্রায়ই শোনা যায়। যদিও বিজ্ঞানীরা এই ব্যাপারটি নিয়ে এখনও সন্দিহান। এখনও জানা যায় নি কোথায় এর অবস্থান। অনেকে দাবী করেন তাদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে আরও একটি ইন্দ্রিয় রয়েছে। কিন্তু সব মানুষই কি এই দাবী করতে পারে?  

এছাড়াও,  আরও কিছু বিষয় বস্তু নাকি রয়েছে এই পৃথিবীতে যা দেখা যায় না, শোনা যায় না, গন্ধ নেই, অনুভব করা যায় না, তারপরও এগুলো নাকি  মানুষের ধারনাকে প্রভাবিত করে। যা পৃথিবীকে অন্য চোখে দেখতে শেখায়। অনেকে আবার ঐ পথে চিন্তা করতে গিয়ে সংসার ধর্ম সব ছেড়ে অন্য পথে চলে যাচ্ছে। সব মানুষ কি তা পারে?  

মানুষের জীবনের স্থবিরতার কারণটা বুঝতে পারছি। পঞ্চইন্দ্রীয়ের এই সীমাবদ্ধতার কারণে হয়ত মানুষ যা দেখে তার পূর্ববর্তি জীবনে, তাতে অনেক ভুল থাকে, কারণ ঈগলের মত তীক্ষ্ন দৃষ্টি তার নেই। মানুষ যা শুনে, তাতে হয়ত অনেক মিথ্যা থাকে, কারণ বাদুরের মত কর্ণ তাদের নেই। মানুষ যে স্পর্শকে পবিত্র ভাবে, তাতে হয়ত অনেক অপবিত্রতা থাকে। মানুষ দুর্গন্ধকে সুগন্ধ ভেবে ভুল করে, কারণ তার ঘ্রানশক্তি কুকুরের মত তীক্ষ্ন নয়। মানুষ বুঝতে পারে না কে তার শত্রু আর কে মিত্র।    

মানুষ তার ইন্দ্রিয়ের এই সীমাবদ্ধতার জন্য প্রতারিত হয়?????? 

কিছু মানুষের জীবনে প্রতারক এত নি:শব্দে প্রবেশ করে যে সেই শব্দ সে শুনতে পায় না, কারণ তার কর্ণ ২০-২০,০০০ হার্টজ এর নীচে বা উপরে কোন শব্দ শুনতে পায় না। কিছু মানুষ আগে থেকে তার বিপর্যয় আঁচ করতে পারে না, যা পিঁপড়া বা অন্যান্য প্রানি ভুমিকম্প বা সুনামির মত যে কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় এর আগে আঁচ করতে পারে। 

মানুষ মাঝে মাঝে বুঝতে পারে না তার আসল কল্যাণ কোথায়। কার সাথে সম্পর্ক করলে বা কার আনুগত্য প্রকাশ করলে তার লাভ হবে এ জ্ঞান অনেকেরই থাকে না। মানুষ তখন নির্বোধের মত কাজ করে।

তারপরও মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, আশরাফুল মাখলুকাত, যার জীবনের গাণিতিক সমীকরণ -0=0=+0 হয়ে দাঁড়ায় কোন কোন সময়।  

Tuesday, April 24, 2012

অধিকার? নাকি দায়িত্ববোধ+অধিকার?


মানবাধিকার। বিশ্বব্যাপী বেশ আলোচিত একটি শব্দ।
এই অধিকার কতটুকু অর্জিত হয়েছে এই পর্যন্ত?

আমাদের সমাজ প্রতিনিয়ত আত্মকেন্দ্রিক এবং বিপদজ্জক হয়ে উঠছে। মানুষ অশান্ত হয়ে উঠছে দিনের পর দিন।

মানুষের অধিকার সুনিশ্চত করা অবশ্যই প্রয়োজন।

কিন্তু যখন কোন অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ফলে  সমাজের এক অংশের দাবী পুরণ হলেও অন্য একটি অংশের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক সেই অধিকার নিয়ে। আলোচনার সুবিধার্থে কয়েকটি উদাহরন তুলে ধরছি।    

উদাহরন ১:
লিভ টুগেদার এখন অনেক দেশেই মানুষের অধিকার হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বা পাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা জানি লিভ টুগেদার এর ক্ষেত্রে কোন ফরমালিটির প্রয়োজন পড়ে না যা গতানুগতিক বিবাহের ক্ষেত্রে অত্যাবশকীয়।

কিন্তু তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে দেখা গিয়েছে যে, লিভ টুগেদার এর নেতিবাচক প্রভাবের ফলে, single parenthood, deprived childhood এবং dependence on welfare বেড়ে গেছে আশংকাজনক হারে।

শিশুরা তাদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের পরিবেশ হারাচ্ছে। এছাড়াও সরকারের ওয়েলফেয়ার বাজেটের উপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। আর এই ওয়েলফেয়ার বাজেটের টাকা আসে গতানুগতিক মধ্য আয়ের পরিবার (Two-parent family) গুলোর ট্যাক্স থেকে।  

সিংগেল প্যারেন্টহুড যার যার ব্যক্তিগত অধিকার এবং পছন্দ। কিন্তু তাদের এই নিজস্ব ইচ্ছাপূরনের ব্যয় বহন করতে হচ্ছে অন্যকে।

উদাহরন ২:
Rights of individuals to live homosexual lifestyles অনেক দেশ এটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে বা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করলে এটি পাপ। যা ধর্মীয় বিশ্বাস, শিক্ষা ও সামাজিক রীতিনীতির সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ নয়।

উদাহরন ৩:
নারীদের right to terminate an unwanted pregnancy অন্যদিকে right of the unborn to live বিপরীতমুখি।

উদাহরন ৪:
বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার দেশীয় আইন অনুযায়ি স্বীকৃত হলেও বিভিন্ন ধর্মীয় আইন (যেমন: খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ) অনুযায়ী স্বীকৃত নয়। আমাদের সমাজে Marital Infidelity, adultery এবং extramarital affair-এর ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে আশংকাজনক হারে। এই সব অবিশ্বস্ত কাজে জড়িত প্রতারকেরা বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকারের সুযোগ নিয়ে নিজের দায়িত্ববোধের কথা ভুলে গিয়ে উন্মুক্ত মানসিকতার লেবাস লাগিয়ে নিজের অন্যায় ইচ্ছা পূরন করে যাচ্ছে। তবে এটাও ঠিক কিছু ক্ষেত্রে এই বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার গুরত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছে। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিসের ভিত্তিতে এই বিপরীতমুখি অধিকার গুলো নিশ্চিত করা হবে বা এই অধিকার গুলোর সব গুলোই কি অত্যাবশকীয়? আমি কোন তর্কযুদ্ধে যেতে চাই না।    

মানুষের চাহিদার শেষ নেই। এই সমস্যা উত্তরনের ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব দায়িত্ববোধ একটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমি মনে করি। দায়িত্ববোধ বলতে খুব সাধারন ভাবে আমরা বুঝি “আমার সম অধিকার যেন অন্যরাও পায় তা নিশ্চিত করা”। ব্যক্তিগত পছন্দের জীবন যাপন করতে গিয়ে অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন না করা। যদিও দায়িত্ববোধ এর সংগা আরও ব্যাপক।

মূল্যবোধ মানুষের মাঝে দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে। সমাজ, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিজীবনে মানুষের কাজকে প্রভাবিত করে তার মূল্যবোধ

কিন্তু আজ সমাজের যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় পরিলক্ষিত হয়। মূল্যবোধহীন সমাজ আত্মকেন্দ্রিক মূল্যবোধ বিবর্জিত অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ব্যস্ত। মূল্যবোধের অবক্ষয়ের সমাজে বিশৃঙ্খলা ও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। 

সামাজিক ন্যায়বিচার, শৃঙ্খলাবোধ, সহনশীলতা, শ্রমের মর্যাদা, সহমর্মিতা, আইনের শাসন প্রভৃতি সামাজিক মূল্যবোধের ভিত্তি।

বৈজ্ঞানিক যুক্তি দ্বারা মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত নয়। সামাজিক মূল্যবোধের কতগুলো বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যেমন, মূল্যবোধের মূল হল ভিত্তি মানসিক ধ্যান-ধারণা, আদর্শাবলি ও নৈতিকতা।

সামাজিক মূল্যবোধ মানুষের মধ্যে ঐক্যসূত্র রচনা করে এবং সমাজ জীবনে গতিশীলতা আনে। মূল্যবোধ সামাজিক প্রয়োজন পূরণের উপায় হিসেবে কাজ করে। সামাজিক মূল্যবোধ যেমন মানুষের মধ্যে ন্যায়-অন্যায় বোধের সৃষ্টি করে, তেমনি মানুষকে অন্যায়, অবিচার ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে অনুপ্রেরণা জোগায়, বিদ্রোহ করতে উদ্বুদ্ধ করে।

সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সমাজের মানুষ মূল্যবোধ সম্পর্কে পরিচিত হয়। ব্যক্তিগত মূল্যবোধগুলোর একত্রিত রূপ হল সামাজিক মূল্যবোধ।






মূল্যবোধ সমাজ থেকে উদ্ভূত, প্রাকৃতিক নয়। ইতিবাচক সামাজিক মূল্যবোধ জাতীয় বিবেককে জাগ্রত করে এবং সহমর্মিতার অনুভূতি দান করে প্রত্যেকের সহানুভূতি ও মমত্ববোধ জাতীয় বন্ধনকে সুদৃঢ় করার মাধ্যমে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে সহায়তা করে।
সামাজিক মূল্যবোধ নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তি সৃষ্টি করে। মূল্যবোধ মানুষের আচরণবিধি প্রণয়ন করে সমাজের স্বার্থে মানুষের আচার-ব্যবহারকে বাঞ্ছিত খাতে পরিচালিত করে এবং ব্যক্তিত্ব বিকাশে ও ব্যক্তির পরিপূর্ণতা অর্জনে সহায়তা করে।
যে মূল্যবোধগুলো ইতিবাচক, যেগুলো আমাদের জীবন-জীবিকা, সংস্কৃতি, জাতিসত্তাকে সমুন্নত রাখতে অবদান রাখছে। বাইরের মূল্যবোধের ছোঁয়া আমাদের গায়ে লাগবে কিন্তু তাতে যেন আমরা আক্রান্ত না হই, নিজেদের অস্তিত্বকে বিলীন করে না দিই, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা আবশ্যক
মূল্যবোধ গঠনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু ইদানিং দেখা যাচ্ছে অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম সংক্ষিপ্ত করে ফেলছে বা কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে।

তাছাড়া নতুন প্রজন্ম এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রতি আকর্ষন হারিয়ে ফেলছে। যুগে যুগে সমাজের মুল্যবোধ গঠনে এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিউক্লিয়াস হিসাবে কাজ করে এসেছে।

আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা, ধর্মের প্রতি অবিশ্বাস, বেহিসাবী জীবনযাপন আমাদের মুল্যবোধের অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ। আমরা এখন এমন এক সমাজে বাস করছি, যেখানে শুধু একটি বিষয়েরই প্রাধান্য আর তা হল আমি কি পেলাম বা পেয়েছি বা পাইনি। অন্যদের ব্যাপারে চিন্তা করার সময় নেই আমাদের। মূল্যবোধ বিবর্জিত অধিকার আদায়ে ব্যস্ত সবাই।

আমরা যদি একটু পিছন ফিরে তাকাই তাহলে দেখতে পাব সম্পুর্ন ভিন্ন চিত্র। মানুষ তখন সামাজিক জীব হিসাবে বসবাস করত আর আমরা ধীরে ধীরে হচ্ছি অসামাজিক। তখন মানুষ একে অন্যের প্রতি যে দায়িত্ব অনুভব করত এখন আর তা দেখা যায় না।

আসুন আমরা শুধু নিজের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট না থেকে একটু দায়িত্ববান হওয়ার চেষ্টা করি। নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করতে গিয়ে অন্যের কোন অন্যায় কাজ কে প্রশ্রয় না দেই। অন্যদের অধিকার গুলোকে সম্মান করতে শিখি। নিজেদের হীন স্বার্থ সিদ্ধির পাপ পথ থেকে ফিরে এসে সুপথে চলি। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি  সুন্দর ও সুষ্ঠু সমাজ গঠনে সচেষ্ট হই।

কিডনি ছাড়া যেমন কোনো প্রাণী বাঁচতে পারে না তেমনি কিডনি নামক মূল্যবোধ ছাড়াও সমাজ বাঁচে না। কিডনি হওয়া চাই সুস্থ, সবল ও কার্যকরী। তবেই প্রাণী এবং সমাজে সুস্থতা এবং পরিচ্ছন্নতা বিরাজ করবে। ব্যক্তি, দল, সমষ্টি সমাজ তথা আমাদের সকলের দায়িত্ব হল আমাদের ঐতিহ্যগত মূল্যবোধগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা।