Saturday, January 21, 2012

একটি চিঠি এবং কৃষ্টি চিরন্তনী


আমাদের এঞ্জেল
আজ ২১ জানুয়ারি ২০১২, রাত টা বেজে ৪৮ মিনিট প্রতিদিনের মত Internet- প্রথম আলো পড়তে বসে চোখ আটকে গেল ছুটির দিনেরভালোবাসা! ভালোবাসা!” লেখাটির উপর ভালবাসার গল্প নিয়ে লেখা আহবান করা হয়েছে

ভালোবাসা শব্দটি পড়ার সাথে সাথে কেন জানিনা মনটা হু হু করে কেঁদে উঠল মনে পড়ে গেল আমাদের একমাত্র মেয়ে কৃষ্টি চিরন্তনীর কথা সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে আমাদের পাওয়া সবচেয়ে মূল্যবান উপহার আজ প্রায় পাঁচ মাস হল আমি আমার পরিবার থেকে সুদুর ফ্রান্সে বসবাস করছি অবশ্য এই ব্যথা শুধু আমার নয় পরিবার ছেড়ে বিদেশ বিঁভুয়ে অবস্থানরত প্রতিটি বাবা বা মা-এরই একই অবস্থা

হঠাৎ চিন্তা হল কিছু লিখি, মনটা হালকা হবে ফ্রান্সে আসার কিছুদিন আগে বাসায় বসে চিন্তা করছিলাম, Skype, Facebook, Nonoh, Mobile-এর যুগে দেশের বাইরে থাকা অবস্থায়, পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে কোন সমস্যাই হবে না হলোও তাই, ফ্রান্সে আসার পর টেলিফোনে আমার পরিবার  বিশেষ করে আমাদের মেয়ের সাথে কথা হয়, প্রায় প্রতিদিন কিন্তু তারপরও একটা শুন্যতা কাজ করে

এত প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ আমার চারিদিকে, কিন্তু তারপরও আমার মনের বায়বীয় অভাব মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়
২৩ নভেম্বর ২০১১ তারিখে সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়েছিল প্রতিদিনের মত, ইমেইল চেক করতে গিয়ে দেখি, বাংলাদেশ থেকে একটি ইমেইল এসেছে একটু অবাক হলাম মা! এত দেখি আমার মেয়ের কাঁচা হাতের লেখা ছোট্ট একটি চিঠি স্কেন করে পাঠানো হয়েছে কতবার যে পড়লাম... বলতে পারব না কি যে প্রশান্তি! কি যে সুখ!
যখনই মন খারাপ হয় চিঠিটি পড়ে কৃষ্টির স্পর্শ অনুভব করি চিঠিটির যে আশ্চর্য শক্তি আমি অনুভব করি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না এখন এই চিঠিটি আমার সব সময়ের সঙ্গী  চিঠিটির প্রতি এক আশ্চর্য ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে, আমার প্রতিদিন একবার করে না পড়লে, কেমন যেন এক শুন্যতা কাজ করে আমার মাঝে, মনে শান্তি পাই না
বাংলাদেশে প্রতিদিন সকালে মেয়ের মুখ দেখে অফিসে যেতাম, এখন সেই সুযোগ নেই কিন্তু এই নেই এর মাঝেও, আমার মেয়ের কাঁচা হাতের লেখা এই চিঠিটি তার অভাব কিছুটা হলেও পূরণ করছে চিঠিটি দিনে দিনে তার সতেজতা হারাচ্ছে, মলিন হয়ে যাচ্ছে, লেখাগুলো অস্পষ্ট হয়ে আসছে কিন্তু চিঠিটির শক্তি যোগানোর আশ্চর্য ক্ষমতা দিন দিন আরও বাড়ছে
এখনো আমার মেয়ের সাথে ফোনে কথা হয়, কিন্তু যখনই মেয়ের স্পর্শ অনুভব করতে ইচ্ছা করে, চিঠিটি কয়েকবার পড়ে ফেলি এক নি:শ্বাসে তারপর প্রাণ ভরে গ্রহন করি এক বুক অক্সিজেন ফিরে আসে মনের প্রশান্তি আবার সতেজ হয়ে উঠি আমি পুর্নোদ্যমে শুরু হয় আমার পথচলা
এই একটি চিঠি আমার এবং আমার মেয়ের মাঝে একটি আশ্চর্য বায়বীয় সম্পর্ক তৈরি করেছে এখন এই চিঠিটিই আমার সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে আপন তাই চিঠিটির প্রতি ভালোবাসা গাঢ় হচ্ছে দিন দিন

3 comments:

  1. লেখাটি পড়তে পড়তে বার বার কাবুলিওয়ালার কথা মনে পড়ল।
    সময় সমাজ যতই এগিয়ে যাক বা আধুনিক হয়ে পরুক না কেন মেয়ের প্রতি বাবার যে টান তা সর্বসময় একই থাকবে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. খুব স্বাভাবিক.....দিন বদলায়, কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা পাল্টায় না, শুধু সময়ের সাথে সাথে প্রকাশের মাধ্যম আর উপস্থাপনায় পরিবর্তন আসে....

      Delete
    2. ধন্যবাদ সময় নিয়ে আমার ব্লগ পড়ে আপনাদের সুচিন্তিত মতামত প্রদানের জন্য। সত্যিই গতানুগতিক যোগাযোগের মাধ্যম যে প্রানের ছোঁয়া বহন করতে পারে আধুনিক প্রযুক্তি তা পারে না।

      Delete

Thank you for your time. I will get back to you soon.
Nathan